সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার, উখিয়া নিউজ ডটকম।
প্রকাশিত: ১৮/০৮/২০২৫ ১১:৪০ এএম

রোহিঙ্গা আগমনের পর কক্সবাজারের উখিয়ায় জনসংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গেলেও স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো সে অনুযায়ী সম্প্রসারিত হয়নি। সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমিত সুবিধার কারণে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ পুনরায় চালুর দাবি উঠেছে জোরেশোরে।

২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, যার সিংহভাগই উখিয়ায় বসতি গড়ে। স্থানীয় জনগণসহ এত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দ্রুতই অচল অবস্থায় পড়ে। সীমিত সুযোগ-সুবিধার কারণে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এন্ডোস্কপি ও সিজার অপারেশনসহ জরুরি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

জনগণের চাপ সামাল দিতে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর সহযোগিতায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ‘উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ চালু হয়। পরে এনজিও ফ্রেন্ডশিপ এর দায়িত্ব নেয়। মাতৃস্বাস্থ্য, দন্তরোগ, চক্ষু, ফিজিওথেরাপি, ল্যাব টেস্ট ও ২৪ ঘণ্টার জরুরি সেবা বিনামূল্যে দেওয়া হতো এখানে। প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা নিতেন। কিন্তু সম্প্রতি অর্থ সংকটের কারণে হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

ফ্রেন্ডশিপের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, অর্থ না থাকায় আপাতত হাসপাতালটি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সরকার বা কোনো দাতা সংস্থা অর্থায়ন করলে আবার কার্যক্রম শুরু করা হবে।

ইউএনএইচসিআরের কক্সবাজার কার্যালয়ের যোগাযোগ কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতালটি স্থানীয় জনগণ এবং আশপাশের ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০২২ সালে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে জাপানের অর্থায়নে এটি নির্মাণ ও সজ্জিত হয়। তিনি আরও জানান, বৈশ্বিক মানবিক সহায়তা ক্রমহ্রাসমান হওয়ায় হাসপাতালটির কার্যক্রমে সংকট তৈরি হয়েছে, তবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে সমাধান খোঁজা হচ্ছে।

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান মীর শাহেদুল ইসলাম রোমান জানান, এই হাসপাতালটি নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত, এমনকি ধনী পরিবারেরও আস্থার জায়গা ছিল। প্রতিদিন শত শত মানুষ চিকিৎসা নিত। বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উখিয়ার ছাত্র প্রতিনিধি মোহাম্মদ সোহেল ইসলাম স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন ও ইউএনও উখিয়া সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন। এতে তিনি দাবি করেন, উখিয়ার প্রায় ৬০ হাজার মানুষের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতে দ্রুত এই হাসপাতালটি চালু করা জরুরি।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী জানান, অর্থ সংকটের কারণে হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এটি সরকারের অধীনে নেওয়া হয়েছে। সরকার যাদের দায়িত্ব দেবে, তারাই পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবেন। তিনি বলেন, উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় জনগণ ও রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা নিশ্চিতে হাসপাতালটি চালু রাখা প্রয়োজন।

আরআরআরসি কার্যালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা ও হাসপাতাল ফোকালপারসন ডা. সরওয়ার জাহান জানান, আপাতত কিছু স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ রয়েছে। তবে আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে আবার সেবা কার্যক্রম চালুর চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা এমএসএফের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোছাঃ নাসরিন জেবিন বলেন, উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতালে পুনরায় পুরোদমে সেবা কার্যক্রম সচল করতে সরকার কাজছে। আমি নিজেও সংশ্লিষ্টের সাথে এবিষয়ে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে উখিয়ার স্বাস্থ্যসেবায় এই হাসপাতাল আবারও ভূমিকা করতে পারবে।

সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিসিইউ ও আইসিও না থাকায় গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু থাকলে স্থানীয় জনগণ ও রোহিঙ্গা উভয়ই সমানভাবে উপকৃত হতো। তাই এলাকাবাসীর একটাই দাবি—দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে অর্থ সংকটে বন্ধ হয়ে যাওয়া হাসপাতালটি আবার চালু করা হোক।

পাঠকের মতামত

উখিয়ায় চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ, নেতাদের নীরবতা নিয়ে ক্ষোভ

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত প্রায় ১২০০ স্থানীয় শিক্ষক কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেছেন। ...

ঘুমধুম সীমান্তে আরাকান আর্মির সদস্য সন্দেহে দুই উপজাতি নাগরিক আটক!

কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) এর অধীনস্থ তুমব্রু বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সকাল ১১টার দিকে সন্দেহভাজন দুইজন ...